নিজস্ব প্রতিবেদক : বরিশাল নগরীর পলাশপুর ও কেডিসি এলাকায় কিস্তির নামে যে ব্যবসা চলছে, তা বাস্তবে আর কিছু নয়—অনুমতি ছাড়াই পরিচালিত একধরনের ঋণ ও মাইক্রোফাইন্যান্স কার্যক্রম। তথ্য অনুযায়ী এই দুই এলাকায় এমন দোকান সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। এসব দোকান কোনো সরকারি অনুমতি ছাড়াই কিস্তির নামে নগদ অর্থ ঋণ দিচ্ছে, আবার নিম্নমানের পণ্য বিক্রির আড়ালে দ্বিগুণ-তিনগুণ টাকা আদায় করছে। ফলে একদিকে গ্রাহকরা প্রতারণার শিকার হচ্ছেন, অন্যদিকে রাষ্ট্র হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। স্থানীয় সূত্র জানায়, পলাশপুর ও কেডিসির দোকানগুলো পণ্য বিক্রির কথা বলে গ্রাহকদের কাছ থেকে সাপ্তাহিক বা মাসিক কিস্তি আদায় করছে। কিন্তু বাস্তবে এগুলো আর্থিক প্রতিষ্ঠান বা এনজিও নয়—এগুলো হচ্ছে ক্ষুদ্র ঋণ কার্যক্রম পরিচালনাকারী প্রতিষ্ঠান, যাদের কোনো অনুমতি নেই। গ্রাহকদের অনেক সময় সরাসরি নগদ টাকা ঋণ দেওয়া হয়, তবে শর্ত থাকে প্রতি মাসে উচ্চ সুদে কিস্তি পরিশোধ করতে হবে। অনেকে টাকা না দিতে পারলে দোকান মালিকদের ভয়ভীতি, হুমকি এমনকি চরম অপমানের শিকার হন। এক ভুক্তভোগী বলেন,আমি দোকান থেকে কিছু টাকা ঋণ নিয়েছিলাম। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি সপ্তাহে কিস্তি দিতাম। কিন্তু তিন মাসের মাথায় দেখি আসল টাকার চেয়ে দ্বিগুণ টাকা দিয়ে ফেলেছি। এখনো তারা বলে, বাকি আছে। আসলে এটা সুদের কারবার ছাড়া আর কিছু নয়। এসব দোকান ৩০-৪০ শতাংশ পর্যন্ত সুদ নেয়। কেউ সময়মতো কিস্তি দিতে না পারলে সুদের অঙ্ক আরও বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এভাবে অনেক পরিবার ঋণের ফাঁদে পড়ে নিঃস্ব হয়ে গেছে। অতীতে বরিশালের কাউনিয়ায় একই ধরনের প্রতারণা ঘটেছিল। কাগাশুরা এলাকার “ফার্নিচার মেলা অ্যান্ড ভ্যারাইটিজ স্টোর” গ্রাহকদের কাছ থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা বা সপ্তাহে ২০০ টাকা করে কিস্তি তুলত। শেষ পর্যন্ত কয়েকশ গ্রাহক কোটি টাকার প্রতারণার শিকার হন। ভুক্তভোগীদের অভিযোগের ভিত্তিতে পুলিশ দোকান মালিককে গ্রেপ্তার করে। বাংলাদেশে ঋণ বা মাইক্রোফাইন্যান্স কার্যক্রম পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক অথবা মাইক্রোক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটি (MRA)-এর অনুমতি নিতে হয়। পাশাপাশি ট্রেড লাইসেন্স, ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নম্বর (TIN) এবং ভ্যাট নিবন্ধন (BIN) বাধ্যতামূলক। কিন্তু পলাশপুর ও কেডিসির দোকানগুলোর কাছে এসব অনুমতির কিছুই নেই। অর্থাৎ তারা সম্পূর্ণ বেআইনিভাবে ঋণ কার্যক্রম চালাচ্ছে। আইন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এটি শুধু ভোক্তার সাথে প্রতারণা নয়, বরং অর্থনৈতিক অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে। আইন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক এম.এ. রাহমান মন্তব্য করেছেন: “যে প্রতিষ্ঠান মাইক্রোফাইন্যান্স বা ঋণ কার্যক্রম পরিচালনা করতে অনুমোদন নেই, তারা সরকারের নিয়ন্ত্রণ ও ন্যায্য সুদের সীমার বাইরে উচ্চ সুদে অর্থ আদায় করে, যা সম্পূর্ণ বেআইনি। এ ধরনের কার্যক্রমের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি।” এধরনের প্রতিষ্ঠান গুলো আর্থিক বাজারকে অস্থিতিশীল করে এবং সরকারের রাজস্ব হারায়। প্রশাসন এখনই কঠোর পদক্ষেপ নিলে অনেক ক্ষতি এড়ানো সম্ভব।” বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এ ধরনের অনুমোদনহীন ঋণ ব্যবসা বন্ধে পুলিশ, ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ ব্যাংকের যৌথ অভিযান প্রয়োজন। আইন অনুযায়ী, এসব দোকানের বিরুদ্ধে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতারণা ও মানিলন্ডারিং আইনে মামলা করা যেতে পারে। স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, প্রশাসন কঠোর পদক্ষেপ নিলে ভুক্তভোগীরা অন্তত আংশিক ক্ষতিপূরণ পেতে পারেন। বরিশাল নগরীর পলাশপুর ও কেডিসি এলাকায় কিস্তি ব্যবসা মূলত একধরনের আধুনিক ঋণ ও মাইক্রোফাইন্যান্স কারবার, যা অনুমোদন ছাড়া চালানো হচ্ছে। গ্রাহকরা কিস্তির নামে ফেঁসে যাচ্ছেন উচ্চসুদের ঋণের ফাঁদে, আর রাষ্ট্র হারাচ্ছে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব। অতীতে কাউনিয়ার মতো প্রতারণার নজির আছে, তাই এখনই পদক্ষেপ না নিলে এই প্রতারণা আরও ভয়াবহ আকার নেবে। অনুমতি ছাড়া ঋণ ব্যবসা কোনোভাবেই চলতে দেওয়া উচিত নয় বলে মনে করেন সচেতন নাগরীক সমাজ।
https://slotbet.online/