নিয়াজ মোহাম্মদ: বরিশালে রাজনৈতিক প্রভাব বিস্তার, ক্ষমতার অপব্যবহার ও পারিবারিক নির্যাতনের অভিযোগে ফের আলোচনায় উঠে এসেছেন জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা শুভ্র প্রকাশ দে এবং তার স্ত্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা ঈষিতা দে। অভিযোগকারীদের দাবি, দীর্ঘদিন ধরে সরকারি চাকরির প্রভাব ও রাজনৈতিক ছত্রছায়া ব্যবহার করে এই দম্পতি নানা অনিয়মে জড়িয়ে পড়েছেন, কিন্তু অভিযোগের পরও প্রশাসন রহস্যজনকভাবে নীরব থেকেছে।
ভুক্তভোগী সূত্রে জানা গেছে, ২০২৪ সালের ৮ জানুয়ারি তৎকালীন রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে এই দম্পতির বিরুদ্ধে লিখিত অভিযোগ দাখিল করা হয়। কিন্তু আওয়ামী লীগ সরকারের প্রভাব খাটিয়ে কিছু দুর্নীতিগ্রস্ত কর্মকর্তা অভিযোগটি গোপন করে ফেলেন। পরবর্তীতে তথ্য অধিকার আইনে আবেদন করেও অভিযোগটির কোনো রেকর্ড পাওয়া যায়নি বলে অভিযোগকারীরা জানিয়েছেন।
অভিযোগকারীদের ভাষ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালের ৪ জানুয়ারি ঈষিতা সরকারি চাকরির বিধি লঙ্ঘন করে বরিশালের যুবলীগ নেতা খান মামুনের বাসভবনে অনুষ্ঠিত একটি নির্বাচনী সভায় অংশ নেন। একই দিনে তিনি আওয়ামী লীগের নির্বাচনী মিছিলে অংশগ্রহণ করে প্রচারণায় সক্রিয় ভূমিকা রাখেন এবং ফুলেল শুভেচ্ছা জানান। সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা ও জাতীয় সংসদ নির্বাচনী আচরণবিধি অনুযায়ী, সরকারি চাকরিজীবীর রাজনৈতিক কার্যক্রমে অংশ নেওয়া সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ।
ওই সভায় উপস্থিত ছিলেন তৎকালীন পানি সম্পদ প্রতিমন্ত্রী জাহিদ ফারুক শামীম, আর সভাপতিত্ব করেন সারেহ এম শেলী। পরবর্তীতে ঈষিতা নিজের ফেসবুক আইডিতে এসব কার্যক্রমের ছবি প্রকাশ করেন, যা এখনো সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরে বেড়াচ্ছে।
অন্যদিকে, ঈষিতার স্বামী শুভ্র প্রকাশ দে—যিনি জনতা ব্যাংকের কর্মকর্তা—তিনিও সরকারি বিধি ভঙ্গ করে বরিশাল সিটি করপোরেশনের মেয়র খোকন সেরনিয়াবাতের নির্বাচনী মিছিলে অংশ নেন এবং তার সঙ্গে তোলা ছবিও প্রকাশ করেন।
এ দম্পতির বিরুদ্ধে সবচেয়ে উদ্বেগজনক অভিযোগ এসেছে পারিবারিক নির্যাতন নিয়ে। শুভ্র দে’র নিজের বাবা-মা অভিযোগ করেছেন, ছেলে ও পুত্রবধূ রাজনৈতিক প্রভাব ব্যবহার করে তাদের মানসিক ও শারীরিকভাবে নির্যাতন করতেন। এমনকি ব্যাংকের দপ্তরে লিখিত অভিযোগও দাখিল করা হয় বলে জানা গেছে।
সাংবাদিকরা ঘটনাটি অনুসন্ধানে গেলে তাদেরও ভয়ভীতি দেখানো হয়। একাধিক সাংবাদিক জানিয়েছেন, ফোনে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে “জীবন শেষ করে দেব” বলে হুমকি দেওয়া হয়।
বর্তমানে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক প্রভাব দুর্বল হলেও, অভিযোগ উঠেছে যে ঈষিতা-শুভ্র দম্পতি এখন বরিশালের এক বিএনপি নেতার বাসায় নিয়মিত আসা-যাওয়া করছেন।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, “দল বদলালেও তাদের প্রভাব কমেনি। এখন সময় এসেছে এই দম্পতির অনিয়ম ও নির্যাতনের বিচার নিশ্চিত করার।
বরিশালের স্থানীয় প্রশাসন বিষয়টি সম্পর্কে জানে কিনা—সে বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলেও কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
সমাজের নানা স্তরে এখন প্রশ্ন উঠেছে: রাজনৈতিক প্রভাব আর সরকারি চাকরির নিরাপত্তার আড়ালে কি ঈষিতা-শুভ্র দম্পতির মতো আরও অনেক ‘অদৃশ্য প্রভাবশালী’ জবাবদিহির বাইরে থেকে যাচ্ছে না?
https://slotbet.online/