নিয়াজ শেখ : সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলোতে দেশের বিভিন্ন জেলা ও শহরে একের পর এক অজ্ঞাত লাশ উদ্ধারের ঘটনা আতঙ্ক সৃষ্টি করেছে। টঙ্গীতে ট্রাভেল ব্যাগে মাথাবিহীন লাশ থেকে শুরু করে নদী, জলাশয় কিংবা গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত দেহ—সব মিলিয়ে যেন লাশের মেলা চলছে। বেশ কিছু ঘটনায় হত্যা মামলা, গ্রেপ্তার ও তদন্তে অগ্রগতি হলেও অনেক লাশের পরিচয় এখনো অজানা।
৮ আগস্ট গাজীপুরের টঙ্গী পূর্ব থানা এলাকায় দুটি ট্রাভেল ব্যাগ থেকে পাওয়া যায় অলি মিয়া (৩৫) নামে এক ব্যক্তির মাথাবিহীন ও খণ্ডিত লাশ। প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে উদ্ধার হলেও পরে পরিচয় শনাক্ত হয়। র্যাব জানায়, ব্যক্তিগত বিরোধের জেরে ৬ আগস্ট শ্বাসরোধে হত্যা করে লাশ টুকরো করে ব্যাগে ফেলে দেওয়া হয়। নিহতের স্ত্রী হত্যা মামলা করেছেন; ৯ আগস্ট রাতে চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ড থেকে তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়।
১ আগস্ট নাটোরের সিংড়া উপজেলার একটি ধানক্ষেত থেকে মুখ কাপড়ে বাঁধা, গলায় টি-শার্ট পেঁচানো অবস্থায় ২৫-২৮ বছর বয়সী এক যুবকের ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় অস্বাভাবিক মৃত্যু (ইউডি) মামলা নিয়ে তদন্ত চলছে।
২৪ জুলাই গোপালগঞ্জ সদরের বিলরুট চ্যানেল থেকে উদ্ধার হয় এক অজ্ঞাত ব্যক্তির গলিত লাশ। দীর্ঘ সময় পানিতে থাকায় মুখাবয়ব পরিবর্তিত হয়ে গেছে; পুলিশ ডিএনএ সংরক্ষণ ও শনাক্তকরণের চেষ্টা করছে।
১১ আগস্ট সীতাকুণ্ডের বাড়বকুণ্ড ইউনিয়নে একটি গাছের সঙ্গে ঝুলন্ত অবস্থায় এক অজ্ঞাত ব্যক্তির লাশ উদ্ধার হয়। মৃত্যুর কারণ ও পরিচয় এখনো অজানা।
৯ আগস্ট আনোয়ারা উপকূলে নৌযান ডুবির ঘটনায় নিখোঁজ আট জেলের মধ্যে দুইজনের দেহ উদ্ধার হয়। তখনো পরিচয় নিশ্চিত না হওয়ায় নৌ পুলিশ ডিএনএ নমুনা সংরক্ষণ ও তদন্ত করছে।
৩ আগস্ট কুলাউড়া রেলস্টেশন সংলগ্ন জলাধারে প্রথমে অজ্ঞাত হিসেবে এক কিশোরের লাশ পাওয়া যায়। পরে পরিবার নিখোঁজ রবিউল ইসলাম নাঈম (১৬) হিসেবে শনাক্ত করে। ঘটনাকে কেন্দ্র করে এলাকাবাসী বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন।
এছাড়াও গত বছরের জুলাই গণঅভ্যুত্থান-সংক্রান্ত সহিংসতায় রায়েরবাজার গণকবরের ১১৪ অজ্ঞাত লাশ আদালতের নির্দেশে উত্তোলনের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এছাড়া ঢামেকে সংরক্ষিত ৬ অজ্ঞাত লাশ ৭ আগস্ট আঞ্জুমান মুফিদুল ইসলামের কাছে বেওয়ারিশ দাফনের জন্য হস্তান্তর করা হয়; ডিএনএ প্রোফাইল সংরক্ষণ করেছে পুলিশ। তদন্ত কর্মকর্তাদের মতে, নদী বা জলাশয়ে দীর্ঘ সময় থাকার ফলে দেহ গলে যায়, ফলে পরিচয় শনাক্ত কঠিন হয়। অনেক ক্ষেত্রে ভুক্তভোগীর কাছে জাতীয় পরিচয়পত্র বা পরিচয়পত্রের কোনো সূত্র থাকে না। আবার হত্যার পর দেহ খণ্ডিত বা বিকৃত করে ফেলার উদ্দেশ্যই থাকে পরিচয় গোপন করা। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, থানাভিত্তিক নিখোঁজ জিডি ও মর্গের তথ্য তাৎক্ষণিক ক্রস-ম্যাচিং, জেলা পর্যায়ে ফরেনসিক ফটোগ্রাফি ও ফিঙ্গারপ্রিন্ট সংগ্রহ, এবং মিডিয়ার মাধ্যমে অজ্ঞাত লাশের বিবরণ প্রচার করলে শনাক্তকরণ প্রক্রিয়া দ্রুত হতে পারে।
https://slotbet.online/