ডেস্ক নিউজ:
বাংলাদেশে চিকিৎসকদের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসা বা অবহেলার অভিযোগ প্রায়ই আলোচনায় আসে। ওনেক সময় ভুল চিকিৎসার অভিযোগ এনে একপ্রকার মব তৈরী করে চিকিৎসকদের হেনস্তার অগনিত প্রমান রয়েছে এদেশে।সম্প্রতি বরিশাল বিএম কলেজের দর্শন বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সাজনিন আহমেদ সাদিয়া বিরল ধরনের ওষুধজনিত পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার কারণে গুরুতর অসুস্থ হয়ে শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। ভুক্তভোগী রোগী অভিযোগ করে ঘটনার সূত্রপাত হয় ডাঃ ইকবাল হোসেন আমানের প্রেসক্রিপশনের পর। চিকিৎসার অংশ হিসেবে দেওয়া ওষুধে সাদিয়ার শরীরে বিরল প্রতিক্রিয়া দেখা দেয়। কিন্তু এর পরপরই শের-ই-বাংলা মেডিকেল কলেজের নাক-কান-গলা বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডাঃ এস. এম. সরোয়ার যাচাই-বাছাই ছাড়াই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এবং গণমাধ্যমে দাবি করেন যে, এটি ভুল চিকিৎসার ফল। তার এ বক্তব্য দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং সাদিয়ার সহপাঠী শিক্ষার্থীদের মধ্যে উত্তেজনা তৈরি হয়। আবার ৩ অক্টোবর সাদিয়ার ঘটনায় ডাঃ আমানকে নিয়ে বরিশালে যখন ব্যাপক আলোচনা ও সমালোচনা চলছে ঠিক সেই মূহুর্তে ডা: এস. এম. সারওয়ার তার নিজস্ব ফেইজবুক এ্যাকাউন্টে একটি স্টাটাস দেয় দিয়ে উল্লেখ করে যেকোন ঔষুধেই পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে। কোন ঔষধে কোন রুগীর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হবে, এটা কোনও ডাক্তারের পক্ষে আগাম অনুমান করা সম্ভব নয়। ঔষধে পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হতে পারে, এটা মেনে নিয়েই আমাদের ঔষধ সেবন করতে হয় পাশাপাশি ডাক্তারের ভুল চিকিৎসার যে কথা বলা হচ্ছে, এটার ও কোনো ভিত্তি নাই। দি ডেইলি স্টার পএিকায় প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন বলা হয়,
আইন অনুযায়ী ভুল চিকিৎসা নির্ধারণ বা এ সংক্রান্ত অভিযোগ তদন্ত করার এখতিয়ার একমাত্র বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিলের (বিএমডিসি) হাতে। ভুক্তভোগী বা তার বৈধ প্রতিনিধি লিখিত অভিযোগ করলে বিএমডিসির শৃঙ্খলা কমিটি বিষয়টি তদন্ত করে এবং প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করে। তবে বিএমডিসির কোনো আঞ্চলিক কার্যালয় না থাকায় জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের রোগীদের ঢাকায় গিয়ে অভিযোগ জমা দিতে হয়। ডাঃ আমান বলেন, “আমি সাদিয়ার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি। তবে বর্তমানে আমি মারাত্মক নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ফোনে আমাকে নিয়ে নানা হুমকি ও মানহানিকর মন্তব্য করা হচ্ছে। তিনি আরো জানান, সাদিয়ার জটিলতাটি Stevens-Johnson Syndrome (SJS) নামক একটি বিরল রোগ, যা ওষুধের প্রতিক্রিয়ায় খুব অল্প সংখ্যক রোগীর ক্ষেত্রে ঘটে। এটি চিকিৎসকের অবহেলার কারণে নয়, বরং রোগীর শরীরের ইমিউন সিস্টেমের অস্বাভাবিক প্রতিক্রিয়ার ফল। শেষ খবর পর্যন্ত, সাদিয়ার শারীরিক অবস্থা আগের চেয়ে ওনেকটা উন্নতির পর্যায়ে বলে জানা যায়। কিন্তু আইন বিশেষজ্ঞরা একাধিকবার মনে করিয়ে দিচ্ছেন, যদি কোনো গণমাধ্যম বা ব্যক্তি যথাযথ তদন্ত ছাড়াই ভুল চিকিৎসার অভিযোগ প্রচার করে, তবে সংশ্লিষ্ট চিকিৎসক মানহানি মামলা, ক্ষতিপূরণ মামলা, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন (ডিএসএ) মামলা এবং প্রেস কাউন্সিলে অভিযোগ দায়ের করতে পারবেন। মিথ্যা তথ্য দেয়ার অপরাধে অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ফৌজদারি ও দেওয়ানি উভয় বিচার প্রক্রিয়ার মুখোমুখি দাঁড় করানো যায়। সাদিয়ার ঘটনা চিকিৎসা-বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে বিরল ওষুধজনিত প্রতিক্রিয়া হতে পারে। অথচ যাচাই-বাছাই ছাড়া একজন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের অন্য ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ প্রচার চিকিৎসকদের সামাজিকভাবে হেয় করার পাশাপাশি আইনগত জটিলতার ঝুঁকি তৈরি করে। আইন অনুসারে, এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত দেওয়ার এখতিয়ার একমাত্র বিএমডিসির, অন্য কারো নয়।
https://slotbet.online/